ভিসা পরামর্শ

জরুরী দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন ?   ভিসার জন্য বারবার আবেদন করছেন পাচ্ছেন না  !  কি করবেন ? দালালের মাধ্যমে ভিসা করার কথা ভাবছেন। কিছু মানুষ রয়েছে বারবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর নিরুপায় হয়ে দালালের কথা ভাবতে থাকে। ভিসা একটি জরুরী বিষয় । তার চেয়ে বড় বিষয় যে দেশে যাওয়ার কথা ভাবছেন সেটি আপনার নিজের দেশ নয় । সেদেশের নাগরিক্ত আপনার নেই। যদি থাকত তাহলে ভিসার প্রয়োজন ছিল না। এমনই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দালালকে বিবেচনায় আনা কতটুকু যেীক্তিক  ? বাংলাদেশের সব মানুষ  শিক্ষিত নয় । খুবই আশ্চর্যের বিষয় তারা সচেতনও নয় ।


ভিসার জন্য দালালের সাহায্য নিতে গিয়ে অনেকেই ৫ বছর থেকে ১০ বছর সাসপেন্ড হয়েছেন। অর্থাৎ এই সময়ে তারা ভিসার আবেদন করলেও ভিসা পাবেন না। আরো জানা দরকার এ্যাম্বাসী কাউকে সাসপেন্ড করলে তা প্রকাশ করেনা । মানে আপনি সাসপেন্ড হয়ে থাকলে আপনি জানতে পারবেন না। এমতাবস্থায় আমি পরামর্শ
 দিব নিম্নলিখিত পদ্ধতি গুলি অনুসরন করার জন্য । যে কোন প্রয়োজনে কমেন্ট এর মাধ্যমে প্রশ্ন করতে পারেন।



নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অনুসরন করলে আপনার ভিসা হতে বাধ্য

কাগজ পত্র নিয়মানুযায়ী গোছ-গাছ করুন

এ্যাম্বাসীতে আবেদন পত্র জমাদানের পূর্বে কাগজপত্র গুলো সাজিয়ে নেওয়া খুবই জরুরী । যিনি ভিসার আবেদন গ্রহন করবেন তার হয়ত সৌন্দর্য প্রয়োজন নেই ।কাগজ পত্র জমা নিতে পারলেই হয়েছে । কিন্তু আপনার প্রয়োজন আছে। প্রত্যেকটা এ্যম্বাসীর কাগজ পত্র সাজানোর একটা নির্দ্রিষ্ট নিয়ম আছে। 

যেমন ধরুন ইন্ডিয়া এ্যাম্বাসীতে কাগজ পত্র সাজানোর নিয়ম 

১। আবেদন পত্র বা ই-টোকেন
২। জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
৩। জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি
৪।চলতি মাসের বিদ্যুৎ  বিলের ফটোকপি
৫। ডলার এন্ডোর্সমেন্ট এর ফটোকপি বা চলতি ব্যাংক একাউন্ট স্টেটম্যান্টের কপি
৬।শিক্ষাগত কাগজ পত্রের ফটোকপি
৭।নাগরিক্ত সনদ পত্র(চেয়ারম্যান এর সার্টিফিকেট)
৮।বর্তমান পেশার পরিচয়পত্র/ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি
৯। পাসপোর্ট এর ফটোকপি
১০। অন্যান্য কাগজপত্র



আরোও পড়ুনঃটাকা সঞ্চয় করার শর্টকাট উপায়




আপনি যদি তাদের নিয়মানুযায়ী কাগজপত্র সাজাতে ব্যর্থ হোন তাহলেও আপনার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হতে পারে। কাগজ পত্র সাজানোর কারন হচ্ছে তারা যখন কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে তখন সিরিয়াল অনুযায়ী চেক করে । এই যেমন প্রথমে আবেদনপত্রের তথ্য যাচাই বাছাই করার পর আপনার  জাতীয় পরিচয়পত্র আছে কিনা দেখতে চায় ঠিক তখন যদি শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্র চলে আসে তাহলে বিরক্তির ব্যপার। সেজন্যই তাদের একটি নিয়ম করে দেওয়া আছে । সেই অনূযায়ী সাজাতে হবে। এ্যম্বাসীতে গেলেই দেখতে পাবেন। 





পরিছন্ন ফটোকপি করুন

আবেদনপত্রের সাথে ফটোকপি জমা দিতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অস্পষ্ট ফটোকপির জন্য আবেদনপত্র প্রত্যাখান করে থাকে। আবেদনপত্রের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই-বাছাই করার সময় বানান ঠিক আছে কিনা দেখতে গেলে ফটোকপি অস্পষ্টতার করনে আবেদন প্রত্যাখান করতে পারে। জাতীয় পরিচয়পত্রের কথা লিখেছি বিধায় শুধুই জাতীয় পরিচয়পত্র নয় ।সব কাগজের ক্ষেত্রে এই পরামর্শ প্রযোজ্য। তাই আবেদনপত্রের সাথে যেসকল ফটোকপি দেওয়া হয় তা অবশ্যই স্পষ্ট হতে হবে। যদি রঙ্গিন ফটোকপি দেওয়ার অনুমতি থেকে থাকে তাহলে তাই দেওয়া উচিত। 




স্ট্যাপলার ব্যবহার করবেন না


কাগজপত্র সাজানোর পর একত্রে রাখার সুবিধার্থে স্ট্যাপলার করার প্রয়োজন পরে। কাগজপত্র  স্ট্যাপলার  করলে যিনি কাগজপত্র চেক করেন,ক্ষেত্র বিশেষে তাকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। খোলা-লাগানোর ক্ষেত্রে বিরক্তির সৃষ্টি হয় । এক্ষেত্রে  শক্ত জেমস ক্লিপ বা স্টিলের  ক্লিপ ব্যবহার করা উচিত।




ডলার এন্ডোর্সমেন্ট/ব্যাংক স্টেটম্যান্ট

ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে ডলার এন্ডোর্সমেন্ট করতে হয়। তবে যাদের ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে তাদের ব্যাংক একাউন্ট স্টেটম্যান্ট দিতে হয়। এই ক্ষেত্রে দেখা যায়  উচ্চমানসম্মত ব্যাংকের স্টেটম্যান্ট বা ডলার এন্ডোর্সম্যান্ট দিলে ভিসা হওয়ার নিশ্চয়তা অনেকাংশে বেড়ে যায়। তাই আবেদনকারীর উচিত উচ্চমানসম্মত বিদেশী ব্যাংক/রাষ্ট্রয়ায়ত্ব ব্যাংক /রপ্তানী সর্ম্পকিত ব্যাংকের স্টেটম্যান্ট বা এন্ডোর্সম্যান্ট দেওয়া উচিত। একাউন্ট ব্যালেন্স মানসম্মত হওয়া উচিত যেন সেই টাকা দিয়ে সংশ্রিষ্ট দেশে ভ্রমন করা সম্ভব হয়। ভারতের ক্ষেত্রে  ৩০০০০ টাকা হলে ভালো ফল দেয়। 





দালালমুক্ত পরিচয়

এ্যম্বাসীর আশপাশে প্রচুর পরিমান গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ঘোরাফেরা করে।তাই কাগজপত্র জমা দেওয়ার সময় বা ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় সাথে দালাল রাখবেন না  । এতে আপনার উপর তাদের নেতিবাচক দৃষ্টি পড়তে পারে। যতটা সম্ভব সৎ ,যোগ্য এবং প্রভাবমুক্ত পরিচয় তৈরি করুন। 





পোশাক-পরিচ্ছদ

কাগজপত্র জমাদানের তারিখে বা ইন্টরভিউয়ে সাদা শার্ট,কালো প্যান্ট পড়ুন।সাদা কাপড় এক ধরনের শুদ্ধতার প্রতীক।  সম্ভব হলে ইন করুন।পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে মনোযোগী হওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মধ্যে ইতিবাচক ধারনাটা পৌছে দেওয়া আপনার স্বার্থেই প্রয়োজন।  তাই যথাসম্ভব পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করুন। 



পাসপোর্ট 

যেসব মানুষ নিয়মিত বিভিন্নদেশে ভ্রমন করে থাকেন। তাদের পাসপোর্ট এর পাতা শেষ হয়ে গেলে নতুন করে পাসপোর্ট নিতে হয়। এই ক্ষেত্রে পাসপোর্ট অফিসে পুরাতন পাসপোর্ট জমা দিয়ে নতুন পাসপোর্ট নিলে একটা উটকো ঝামেলার সৃষ্টি হয়। নতুন পাসপোর্ট নিয়ে যখন এ্যাম্বাসীতে যাবেন ।তখন পুরাতন পাসপোর্ট চেয়ে বসবে। বলবেন পুরাতনটা জমা দিয়ে এসেছেন । তারা বলবে এত কথা শুনতে চাইনা , পুরাতনটা ছাড়া জমা নিব না আবার জমা নিলেও ভিসা দিতে চায় না। তাই নতুন পাসপোর্ট নিলে পুরাতনটা জমা না দিয়ে নতুনটার সাথে রেখে দেওয়ার পরামর্শ রইল। পাসপোর্ট এর পাতা অনেকটা টাকার মত  কাগজ দিয়ে বানানো যাতে নকল করা না যায়। কিন্তু ময়লা হলে বা পানিতে ভিজে গেলে নকলের মত লাগে তাই পাসপোর্ট পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন  রাখা উচিত।



বিদ্যুৎ বিল

বর্তমান ঠিকানা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এ্যাম্বাসী বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি নিয়ে থাকে। যদি সম্ভব হয় বিদ্যুৎ বিলের  মূল কাগজ দিলে ভালো রেজাল্ট পেতে পারেন। গত তিন মাসের মধ্যে যে কোন ইউটিলিটি বিলের কপি এ্যাম্বাসী চেয়ে থাকে। এক্ষেত্রে চলতি মাসের কপি দেওয়া উচিত।



পেশা

ভিসা আবেদন করার সময় বর্তমান পেশার পরিচয় সংক্রান্ত কাগজ জমা দিতে হয় । এক্ষেত্রে সততা প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক । ভূয়া কাগজপত্র দাখিল করা হিতের বীপরিত কাজ করে। তাই ভূয়া আইডি কার্ড ,ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি  জমা দেওয়া উচিত নয়। 

ঘুরে আসুন:ইলেকট্রনিক্স পণ্য কেনার কৌশল




অন্যান্য 

অন্যান্য মেনুতে আপনাকে অন্যান্য কিছু তথ্য দেওয়া যাক। এ্যাম্বাসীতে আবেদন করার সময় যদি আপনার কোন প্রসংশা পাওয়ার মত কৃতকর্ম থেকে থাকে তার প্রমান দাখিল করুন । যেমন পুরস্কার এর সার্টিফিকেট,সামাজিক অবদানের সীকৃতস্বরুপ পাওয়া সার্টিফিকেট ইত্যাদি এইগুলো দেওয়া বাধ্যতামূলক নয় কিন্তু কাজে দেয়। বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগান । প্রথম আবেদনেই ভিসা নিন। 


Comments